কিডনি রোগ থেকে বাচার উপায়।



    বর্তমানে আমাদের এই বিশ্বে কিডনি রোগটিতে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। কিডনি রোগে আক্রান্ত কোন ব্যাক্তি যদি নিয়মিত ডাক্তারের নির্দেশনা আনুযায়ী সময় মতো চিকিৎসা না নেন তবে কিডনি বিকল হওয়া কিংবা ফেইলরও হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। আর এই কিডনি বিকল হওয়া মানে কিডনির কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়া। তবে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত ব্যাক্তিদের কিডনি বেশি বিকল বা ফেইলুর হয়। কিডনি বিকল হওয়ার মূল কারণ বেশি রোগে আক্রান্ত বা অনিয়ন্ত্রিত রোগ। মেডিসিন সব রোগের মতো এ রোগেও কার্যকরী কিন্তু মেডিসিনের সাথে কিডনি রোগ প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস এর পরিবর্তনে বা নিয়ন্ত্রন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।








    আমাদের প্রতিটি অঙ্গই বেঁচে খুব জরুরি। কিন্তু আমদের শরীরের সব অঙ্গগুলোর মধ্যে কিডনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। সময়মতো কিডনি রোগের চিকিৎসা না করলে কিডনির ধীরে ধীরে অবনতি হয়ে এক পর্যায়ে মানুষের মৃত্যু ঘটে।




    কিডনি বিকল হতে পারে পাঁচটি ধাপে। এর মধ্যে চারটি ধাপ বা বলা যায় প্রায় শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার মাধ্যমে, কিডনি বিকল হওয়া মাত্রা অনেকংশে কমানো যায়। যদি পাঁচ নম্বর ধাপ অর্থাৎ কিডনি বিকল হয়ে সর্বশেষ পর্যায়ে গেলে বেঁচে থাকা বা ঐ রোগীকে বাচানোর জন্য দুটি পথ খোলা থাকে।

    ১. ডায়ালাইসিস 

    ২. কিডনি সংযোজন।




    এই ডায়ালাইসিস এতটাই ব্যয়বহুল এলটি চিকিৎসা, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। শুধু বর্তমান বাংলাদেশের ১০% লোক এ দুই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের সকলের সচেতন থেকে কিডনি রোগের প্রতিরোধ করা জরুরী। 

    সাধারন ভাবে কিডনি রোগের যে যে লক্ষণ দেখা যা সেগুলো হল:

    ১. প্রস্রাবে ভিন্নতা
    কিডনি রোগ হলে প্রথমেই দেখা যায় প্রস্রাবে নানা রকম সমস্যা। কিডনির মধ্যে সমস্যা সৃষ্টির ফলে প্রস্রাব বেশি হয়ে থাকে আবার কারো কারো প্রস্রাব কমও হয়ে থাকে। প্রস্রাবের বিষয়টি রাতেই বেশি দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গাঢ় রঙের প্রস্রাব হয়। তাছাড়াও মাঝে মাঝে প্রস্রাবের বেগ হয় কিন্তু প্রস্রাব হয় না বা স্বাভাবিক হয় না।

    ২. প্রস্রাব করার সময় বা পরে ব্যাথা
    কিডনি রোগের আরো একটি লক্ষণ হল প্রস্রাবের সময় ব্যাথা অনুভব হওয়া। এই ব্যাথা প্রস্রাবের পরও হতে পারে। প্রস্রাবের সময় কিংবা প্রস্রাবের পর ব্যাথা ও জ্বালাপোড়া করা হল ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এর প্রধান লক্ষণ। আর যদি কোন ব্যাক্তি এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে জ্বর এর সাথে পিঠের পেছনে একটু নিচের দিকে ব্যাথা অনুভব হয়।

    ৩. প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া
    যদি আপনার প্রস্রাবে রক্ত যায়, তাহলে আপনাকে এখনই সতর্ক হতে হবে। সাথে সাথে আপনার নিকটস্ত রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন। এই প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

    ৪.ত্বকের মধ্যে র‌্যাশ
    যখন কিডনি সম্পূর্ণ অকার্যকর বা বিকল হয় তখন রক্তে মধ্যে বর্জ্য পদার্থ থেকে যায়। কেনানা কিডনির মূল কাজই হল ছাকনি। ত্বকের মধ্যে বর্জ্য পদার্থ বা দূষিত পদার্থের পরিমান বেড়ে গেলে শুরু হয় চুলকানি, র‌্যাশসহ এ জাতীয় নানা রোগ।

    ৫. বমি বমি ভাব
    কিডনি সমস্যার ফলে যখন রক্তে নাইট্রোজেন গঠিত বর্জ্য পদার্থের পরিমান বেড়ে যায় তখন রোগীর বমি বমি ভাব হয় এমনকি বমিও হতে পারে।

    ৬. শ্বাস ছোট করে নেয়া
    কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির ফুসফুসে ধীরে ধীরে একটু করে তরল পদার্থ জমা হতে থাকে। কিডনি রোগ হলে দেহে রক্তের অভাব দেখা দেয়। এর ফলে শ্বাস গ্রহনে সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং ছোট ছোট করে শ্বাস গ্রহন করে।

    ৭. পিঠে ব্যথা
    কিডনি রোগ হলে নানা রকমের লক্ষণ প্রকাশ পায়।এর মধ্যে অন্যতম হল শরীরে ব্যাথা। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যাক্তির পিঠের একটু নিচের দিকে দুই পাশে ব্যাথা হয়ে থাকে। কিডনি রোগের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ এটি।

    ৮. শরীর ফোলা
    কিডনি ছাকন যন্ত্র হিসেবে মানবদেহে কাজ করে থাকে। এটি মানুষের দেহের নাইট্রোজেন গঠিত বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি বাইরে বের করে থাকে। কিডনিতে কোন সমস্যা হলে এ পানি বের হতে পারে না। ফলে মানুষের শরীরে ফোলাভাব চলে আসে বা দেখা যায়।

    ৯. মনোযোগ স্থির না থাকা
    কিডনি রোগের ফলে দেহের লোহিত রক্তকণিকার পরিমান কমে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন সঠিক ভাবে হয় না। এই কারনে কোন কাজে ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়।

    ১০. সবসময় শীত শীত অনুভব হওয়া
    কোন ব্যাক্তি যদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় তবে আবহাওয়া গরম থাকলেও শীত শীত অনুভব হয়। আর কিডনির বেশি সমস্যা হলে জ্বর হওয়ার সম্ভবনা থাকে।







    কিডনি সচল রাখার জন্য যা করনীয়

    ১. যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের রক্তের মধ্যে বিভিন্ন উপাদান যেমন শর্করা ও প্রস্রাবের অ্যালবুমিন নিয়মিত পরীক্ষা করা। এবং রক্তের গুরুত্বপূর্ন উপাদান হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখা ও না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

    ২. উচ্চ রক্তচাপে রোগীর সবসময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না সে দিকে লক্ষ রাখা। যাদের প্রস্রাবে অ্যালবুমিন ১৩০/৮০-এর কম, সে ব্যাক্তির রক্তচাপ ১২০/৭০-এর কম থাকা।

    ৩. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কিডনিতে সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। তাই এসকল রোগীদের কিডনি প্রতি ৬ মাস পর পর পরীক্ষা করে নেয়া।

    ৪. বাচ্চাদের যদি গলায় ব্যথা, জ্বর ও ত্বকে খোস-পাঁচড়া জাতীয় কোন অসুখ হয় তবে সঠিক সময়ে বা দ্রুত চিকিৎসা করে নিন। কারণ এই সকল রোগগুলোর সঠিক ও দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

    ৫. মানবদেহে ডায়রিয়া, বমি ও রক্ত আমাশয় খুব মারাত্মক রোগ। এগুলো হলে রক্ত পড়ে ফলে কিডনি লবণশূন্য হয়ে ফেইলুর হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই এসব রোগে আক্রান্ত হলে প্রয়োজন মতো খাবার স্যালাইন খাওয়া জরুরি। যদি দরকার হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শিরায় স্যালাইন লাগান।

    ৬. চর্বি জাতীয় ও লবণ একদম কম খাওয়া, না খেলে উত্তম। বেশি বেশি পানি খাওয়া।

    ৭. ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক কোন ধরনের ওষুধ না খাওয়া।

    ৮. প্রস্রাবের কোন সমস্যা বা ব্যাথা অনুভব হলে চিকিৎসা নিন।




    কিডনিতে কোন সমস্যা আছে কি না তা জানতে দুটি পরীক্ষা করলে হয়। সহজেই জানা যায় কিডনি তার কাজ সম্পূর্ণভাবে করছে কি না। এর মধ্যে একটি পরীক্ষা হলো- প্রস্রাবের মধ্যে অ্যালবুমিন বা মাইক্রো অ্যালবুমিন কি বের হয়? আর অন্য আর একটি হল রক্তের থাকা ক্রিয়েটিনিন।

    যদি কোন ব্যাক্তি যদি তার জীবন যাপন স্বাস্থ্যকর করে এবং সুন্দর করে, স্বস্থ্যের প্রতি সচেতন হন তবে সে কিডনিকে বিকল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল পরিমান মত পানি পান করা।

    Post a Comment

    0 Comments